গারো পাহাড়ে বাড়ছে হাতির আনাগোনা

 

গারো পাহাড়ে বাড়ছে হাতির আনাগোনা




শেরপুরে আশার আলো: এশিয়ান হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

বাংলাদেশে এশিয়ান প্রজাতির হাতির সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং বিলুপ্তির পথে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। তবে শেরপুরে পরিস্থিতি ভিন্ন। গত এক বছরে সেখানে প্রায় অর্ধশত নতুন হাতিশাবকের জন্ম হয়েছে, যা এ অঞ্চলে হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির আশাব্যঞ্জক দিকটি প্রকাশ করছে।

সর্বশেষ ২২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ অফিসের পাশের জঙ্গলে একটি হাতিশাবকের জন্ম হয়। এর আগেও একই এলাকায় কয়েকটি হাতিশাবকের জন্মের খবর পাওয়া গেছে। বালিজুরি রেঞ্জের কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, তাদের রেঞ্জে তিনটি হাতির দল নিয়মিত বিচরণ করে, প্রতিটি দলে প্রায় ৩০-৩৫টি হাতি রয়েছে, যার মধ্যে সাত থেকে আটটি হাতিশাবক দেখা যায়। নবজাতক শাবকটিকে সুস্থ অবস্থায় তার মায়ের সঙ্গে দলবদ্ধভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।

হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব ও উত্তরণের চেষ্টা

দীর্ঘদিন ধরে শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী এবং শ্রীবরদী উপজেলায় হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। কৃষকরা ফসল রক্ষায় বিদ্যুতায়িত তার ব্যবহার করায় অনেক বন্য হাতি মারা যাচ্ছে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৪৩ জন মানুষ হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন এবং মানুষ কর্তৃক ৩২টি হাতি হত্যা করা হয়েছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যৌথভাবে হাতি রক্ষা ও জানমালের ক্ষতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে এবং হাতির আক্রমণ ঠেকাতে তারা বন বিভাগের সহযোগিতা নিচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাতি হত্যা বন্ধে আইন প্রয়োগের উদ্যোগও দেখা গেছে। ২০২১ সালে এবং ২০২৪ সালে দুটি হাতি হত্যার ঘটনায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

হাতি সংরক্ষণে উন্নয়নমূলক উদ্যোগ

বালিজুরি রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, হাতি রক্ষায় ৫০০ হেক্টর জমিতে খাদ্যবান্ধব গাছ রোপণ করা হয়েছে। এতে হাতির খাদ্য সংকট অনেকটাই কমে এসেছে। ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে বনের ভেতর হাতির দল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি দলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাতিশাবক রয়েছে।

শেরপুর বিভাগীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, "এ অঞ্চলে হাতির সংখ্যা বাড়ছে, যা একটি আশার খবর। চার বছর অন্তর একটি হাতি শাবকের জন্ম দেয়, তবুও খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল উন্নত হওয়ায় এখানে হাতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।"

পরিবেশবাদী সংগঠনের আহ্বান

পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মারুফুর রহমান জানান, "হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির খবর অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে জানমাল ও পরিবেশ রক্ষা করতে স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের একত্রে কাজ করা জরুরি।"

শেরপুরের এই ইতিবাচক পরিবর্তন এশিয়ান হাতি সংরক্ষণের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ এবং বন বিভাগের উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষ ও হাতির সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব।

Post a Comment

0 Comments