রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান

 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান




দেশের জনগণের মধ্যে বিভাজন এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, হানাহানিসহ দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলটি বিভাজনের পথ এড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কথা বলেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেখা করে।

বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে কয়েক দিন ধরে যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ছাত্রদের সমস্যা—এগুলো নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আমরা উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। এসব বিষয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছি। সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়ার কথাও বলেছি। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা তার পরিষদ নিয়ে অতি দ্রুত উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করবেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন যেটা প্রয়োজন আমরা বলে এসেছি যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেটি মোকাবেলার জন্য বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা দেশের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে চায় তাদের প্রতিহত করার জন্য অবশ্যই একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সে কথাগুলো আমরা বলে এসেছি।’

প্রায় ১ ঘণ্টার বৈঠকে দেশের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ, এলাকাভিত্তিক টিসিবির ট্রাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি বাড়ানো, সারা দেশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং কৃষিতে সার সরবরাহ বাড়ানোর বিষয় আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। সেই সঙ্গে শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত রাখা, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।

‘তিন মাস হয়নি এরই মধ্যে আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে’: গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনটা মাস হয়নি এখনো, এর মধ্যে আমাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এ চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যাবে না—যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৫ আগস্ট বিজয় অর্জন হয়েছে রাজপথে অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে, অনেক প্রাণের ভেতর দিয়ে। কিন্তু তার ফল কি এ বাংলাদেশ? তিন মাস না যেতেই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। একজন আরেকজনের বুকের রক্ত ঝরাচ্ছি। এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে! চিন্তা করতে পারেন! গত কয়েক দিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন কথা বলতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ কিছু মানুষ নিজেদের বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করছেন। আর গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য মিডিয়ায় যে ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে, তার নিন্দা জানাই। যে মিডিয়ার স্বাধীনতার জন্য সারা জীবন লড়াই করলাম, সেখানে জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও স্লোগান দেয়া হচ্ছে। এ বাংলাদেশ আমি কখনো দেখতে চাইনি।’

ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ড্যাব এ সভা আয়োজন করে।

বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, ‘কারো দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জীবন দিয়ে রক্ষা করতে হবে—এটাই গণতন্ত্র। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি কারণ সে আমার গলা টিপে ধরেছে। অতএব ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হবে। আমরা কি বুঝি, আমাদের ভয়টা কোথায়; আমরা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি?’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার কারো একার নয়। এ সরকার অসংখ্য ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করুন। এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যদি দেশকে ভালোবাসেন তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না; কারো কাছে মাথা নত করবেন না। ১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করছি। যেকোনো সময় জেলখানায় যেতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি বাক, ব্যক্তি ও ভোটের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডা. মিলন আমাদের অনুপ্রেরণা। তার অবদান কখনো অম্লান হবে না। গণতন্ত্রের সব শহীদকে শ্রদ্ধা জানাই।

আসুন ডা. মিলন যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে জীবন দিয়েছেন, সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি।’

Post a Comment

0 Comments