ভারতের সাথে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক
বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন: সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
নানা সংকটের মধ্যে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)। আগামী ৯ বা ১০ ডিসেম্বর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এফওসিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন।
প্রাসঙ্গিকতা ও সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয়:
গত ২৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে সর্বশেষ এফওসি অনুষ্ঠিত হয়। এবারের এফওসি দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আলোচনা হবে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে:
- দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি: দুই দেশের মধ্যে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও জটিলতা নিরসনের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
- সম্পর্কে উত্তেজনা হ্রাসের কৌশল: বাংলাদেশ ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তারের ঘটনাসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরবে।
- সীমান্ত সম্পর্কিত ইস্যু: আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।
- শেখ হাসিনা প্রত্যর্পণ: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হিসেবে স্থান পাবে।
শেখ হাসিনা ইস্যু:
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। দেশে ফিরে আসলে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এফওসিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার অবস্থান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
বাণিজ্য ও ভিসা সমস্যার সমাধান:
বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা কার্যক্রম বর্তমানে সীমিত। জরুরি চিকিৎসা ও তৃতীয় দেশের ভ্রমণের জন্য ভিসা দেওয়া হলেও জনবলের অভাবের কারণে পূর্ণাঙ্গ সেবা বন্ধ রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে ভিসা জট খুলতে ভারতের পক্ষ থেকে নমনীয় মনোভাব আসতে পারে। একইসঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাধা দূর করার বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাবে।
প্রতিবেশী সম্পর্কের ভবিষ্যৎ:
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এফওসির বিষয়ে বলেন, “আমরা চাই ভালো সম্পর্ক, তবে সেটি দুই পক্ষের চেষ্টার মাধ্যমেই সম্ভব। এফওসি হবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম পদক্ষেপ।”
উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, এবং ভারত-বাংলাদেশ রাজনৈতিক বোঝাপড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কার্যকর সমাধানের পথ খোঁজা হবে।
এই বৈঠক থেকে দুই দেশ যে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে, তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচিত হবে।
0 Comments